Tuesday, 26 February 2013

অতৃপ্ত হৃদয়


 একমনে হেঁটে চলেছে অমিত রাস্তার ফুটপাথের উপর দিয়ে ! কোনদিকে দৃষ্টিপাত নেই ! মাথা নামানো নিচের দিকে রাস্তার কোনো কলাহোল তার কানে ঢুকছে না ! কানের ভিতরে বেজে যাচ্ছে অনিতাদির ভর্ত্সনা !
- তুই কি পুরুষ মানুষ ??
আরও অনেক কথা ভর্ত্সনার সুরে বলেছিল অনিতাদি ! জীবনে প্রথম কেউ অমিত কে এই ভাবে ভর্ত্সনা করলো ! অথচ অমিত তো কোনো দোষ করেনি ! তবুও কেন যে অমিত কে অনিতাদী এমন ভাবে অপমান করলো? চোখের কনে কেমন যেন জ্বালা জ্বালা করতে লাগলো অমিতের ! এই অপমানের জ্বালা ঠিক হজম করতে পারছিলনা সে ! তাই একবার তার অন্তরাত্মা ফুঁসে উঠে বিদ্রোহ করতে চাইল ! কিন্তু অমিতের অন্য সত্তা অমিতকে সেটা করতে দিচ্ছেনা কিছুতেই ! কারণ অমিত অনিতাদিকে খুবই ভালোবাসে ! অনিতা দি যদিও অমিতের নিজের কোনো দিদি নয় অর একমাত্র বড় দিদি সুবর্ণার বান্ধবী অনিতা দিদি ! দুজনেই ছিল হরিহর আত্মা ! আর অমিত ছিলো ওর দিদির নেওটা ! দিদি যখনি কোথাও যেত অমিতকে সঙ্গে নিয়ে যেত ! যদিও অমিত সুবর্ণার থেকে প্রায় ৬ বছরের ছোট তবুও লোকে সুবর্ণাকে দেখে টিটকারী দিয়ে বলত "এই সুবি ! তোর বডিগার্ড তোকে গার্ড দিছে নাকি তুই তোর বডিগার্ডকে গার্ড করছিস?" সুবর্ণ সবাইকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ভেন্গিয়ে বলতো " বডিগার্ডের দরকার তোমাদের ! আমার কোনো বডিগার্ডের প্রয়োজন নেই ! এটা আমার ভাই ! আর আমার ভাই যতক্ষণ আমার সাথে আছে ততক্ষণ আমার কোনো বডিগার্ডের প্রয়োজন নেই ! "
একমাত্র যে সময় টুকু সুবর্ণ আর অমিত স্কুলে থাকত সেই সময়টুকুই দুজনে আলাদা থাকত ! অমিতের বাবা মা খুব চিন্তা করতেন যখন সুবর্ণার বিয়ে হয়ে যাবে তখন অমিত আর সুবর্ণ কি করে একে অপরকে ছেড়ে থাকবে ! সেই সুবর্নাদির বান্ধবী হিসাবে অমিত অনিতারও প্রিয় পাত্র হয়ে গেছিল ! আর তার থেকেও অমিতের উপর অনিতার অশেষ স্নেহের কারণ হোলো অনিতার কোনো ভাই ছিল না ! মা বাবার একমাত্র সন্তান ছিল অনিতা ! নিজের কোনো ভাই বন না থাকার দুক্ষ অমিত কে দিয়ে প্রুওন করে নিয়েছিলো অনিতা ! আর আজ সেই অনিতা অমিতকে অপমান কোরে ওকে লাথি মেরে অর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল !
লজ্জায় অপমানে অমিতের কান মাথা ঝালাপালা করে উঠলো ! নিজেকে সামলানোর অনেক চেষ্টা করেও সামলাতে পারল না অমিত ! চলতে চলতেই হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো অমিত ! চোখের জ্বলে ঝাপসা হয়ে উঠলো চোখের দৃষ্টি ! কান্নার গুমড়ে চোখের সামনে অন্ধকার দেখতে লাগলো অমিত ! তারপর হটাত একটা প্রচন্ড জোরে পিছন থেকে ধাক্কা আর চারিদিক থেকে ভেসে এলো গেলো গেলো রব ! তারপরের ঘটনা অমিত আর কিছুই জানেনা !
সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে ! সুবর্ণা আর অনিতার সিট পরেছে বারাসতের মহারানী বালিকা বিদ্যালয়ে ! সুবর্নাদের বাড়ি থেকে অনেক দুরে ! যেতে গেলে আগে গঙ্গা পার হয়ে তারপর অটো বা বাসে করে মহারানী বালিকা বিদ্যালয়ে পৌঁছনো যায় ! সেটাতেও কোনো অসুবিধা ছিলোনা ! কিন্তু সব থেকে বেশি অসুবিধা হোলো নৈহাটির ফেরিঘাটে আড্ডা দেওয়া কিছু বখাটে ছেলেদের নিয়ে ! প্রথম যেদিন ওরা পরীক্ষা দিতে যায় সেদিন ওদের সাথে অমিতের বাবা গেছিলেন তাই হয়ত সেই রকম বিপদের আভাস ওরা পায়নি ! কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকে শুরু হয়ে গেলো এক অভাবনীয় জঘন্য ইভটিজিং ! যাবার সময় ওরা অতটা গায়ে মাখেনি ! কিন্তু ফেরার সময় একজন হটাত ছুঁটে এসে অনিতার একটা মাই টিপে দিয়ে পালিয়ে গেল ! আর বাকি বখাটে ছেলে গুলো দাঁত বার করে খ্যা খ্যা করে হাসতে লাগলো ! লজ্জায় সুবর্ণ আর অনিতার চোখ মুখের অবস্থা লাল হয়ে উঠলো !! সেদিন দুজনেই বাড়ি ফিরলো কিন্তু মুখ চোখ একদম থমথমে ! বাবা মা এমনকি অমিত অনেক বার প্রশ্ন করেও ওদের কাছ থেকে কোনো উত্তর পায়নি ! শেষে ভেবে নিয়েছিল হয়তো পরীক্ষা খারাপ হয়েছে তাই মন খারাপ ! কেউ আর ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়নি ! পরের দিন ছুটি ছিল ! অনিতা সন্ধ্যে বেলায় এসে সোজা সুবর্নাদের ঘরে ঢুকে পড়ল ! বেশ কিছুক্ষণ পরে যখন অনিতা চলে গেল তখন দুজনের মুখেই একটুকর হাসি লেগে ছিল !



bakituku ekhane dekhun

No comments:

Post a Comment